সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বাড়িতেই করে নিন ফেসিয়াল

যেদিন থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে, খাটাখাটনির পরিমাণ যেন বেড়ে তিনগুণ হয়ে গেছে! যে সব মেয়ে এতদিন অফিস করতেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই ওয়ার্ক ফ্রম হোম হয়ে যাওয়ায় অফিসের কাজ তো করতে হচ্ছেই, সেই সঙ্গে বাড়িতে থাকার সুবাদে ঘরের কাজ থেকেও রেহাই মিলছে না! অন্যদিকে যাঁরা হোমমেকার, তাঁদেরও পরিশ্রম বেড়ে গেছে কারণ বাড়ির প্রতিটি সদস্যই সারাক্ষণ বাড়িতে থাকছেন, ফলে এটা ওটা কাজকর্ম লেগেই থাকছে। স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্তির ছাপ পড়ছে মুখে! পার্লার বন্ধ থাকার কারণে একটু যে ফেসিয়াল করিয়ে আসবেন, সে সুযোগও মিলছে না! ফলে চোখের কোলে আরও গাঢ় হয়ে চেপে বসছে কালি, ব্রণ, ব্ল্যাকহেডসের দাপটে বিবর্ণ দেখাচ্ছে মুখ!

কিন্তু আপনার হাতের কাছেই যখন উপায় আছে, তখন পার্লার খোলার অপেক্ষা করবেন কেন? বরং বাড়িতে কিছুটা ফাঁকা সময় বের করে নিজেই করে নিন ফেসিয়াল! বিশ্বাস করুন, ব্যাপারটা মোটেই খুব একটা কঠিন নয়, আর বাড়িতে ফেসিয়াল করতে আপনার মোটেই একগাদা জিনিসের দরকার নেই। বরং রান্নাঘরের কয়েকটি সাধারণ উপাদান দিয়েই খুব ভালো ফল পাবেন! ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে আর আয়নায় নিজেকে দেখে মনটাও চাঙ্গা লাগবে! দরকার শুধু হাতের কাছে কিছু সাধারণ প্রাকৃতিক উপাদান! আসুন দেখা যাক!

মুখ পরিষ্কার
ফেসিয়ালের প্রথম ধাপ এটি। ত্বকের ধরনের সঙ্গে মানানসই ক্লেনজার বেছে নিন। মুখে হালকা গরমজলের ঝাপটা দিয়ে ভিজিয়ে ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। মুখ পরিষ্কার করতে বেছে নিতে পারেন মধু। মধুর আর্দ্রতা আপনার ত্বক কোমল, নরম রাখবে। ভেজা মুখে মধু লাগিয়ে এক মিনিট মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। সব ত্বকের পক্ষেই এটি উপযোগী।

এক্সফোলিয়েট করুন 
এবার ত্বক থেকে মৃত কোষ তুলে ফেলার পালা। স্বাভাবিক ত্বক হলে এক চাচামচ ওটমিল গুঁড়ো করে তার সঙ্গে এক চাচামচ মধু আর এক চাচামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে নিন। ত্বক শুষ্ক হলে মধু আর অলিভ অয়েলের সঙ্গে মেশান এক চাচামচ চিনি। আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মধু আর চিনির সঙ্গে এক চাচামচ জল মেশালেই হল! মুখে লাগিয়ে কোমলভাবে রগড়ে তুলে দিন যাবতীয় মৃত কোষ। খুব কড়া হাতে ঘষবেন না কিন্তু! তাতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। 

স্টিম নিন 
চওড়া পাত্রে জল ফুটিয়ে নিন। তারপর মাথায় একটা তোয়ালে চাপা দিয়ে জলের পাত্রটার উপর ঝুঁকে পড়ুন যাতে ভাপটা মুখে লাগে। পাঁচ-সাত মিনিট এভাবে ভাপ নিন। ইচ্ছে করলে জলে পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন, ত্বক বাড়তি সতেজতা পাবে।

ফেস মাস্ক
মাস্কের কাজ হল ত্বকে পুষ্টি জোগানো। স্বাভাবিক ত্বকে মধু, টক দইয়ের প্যাক, শুষ্ক ত্বকে আধখানা চটকানো পাকা কলা আর মধু, তেলতেলে ত্বকে মুলতানি মাটি আর মধুর প্যাক দারুণ ভালো কাজ করে। সমানভাবে সারা মুখে মেখে আধঘণ্টা চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। চোখে শসা স্লাইস করে কেটে চাপা দিয়ে রাখতে পারেন, অথবা গোলাপজলে তুলো ভিজিয়ে চেপে রাখুন। ত্বক আর চোখ দুইই স্নিগ্ধ থাকবে। আধঘণ্টা পরে ঠান্ডা জলে মাস্ক ধুয়ে তুলে দিন।

টোনার
এবার মুখের খুলে যাওয়া রোমছিদ্র বন্ধ করার পালা আর তার জন্য দরকার টোনার। আধ চাচামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগারের সঙ্গে এক চাচামচ জল মিশিয়ে তাতে তুলো ভিজিয়ে মুখটা মুছে নিন। অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স অটুট রাখবে। শসার রসও খুব ভালো টোনার, তা ত্বককে স্নিগ্ধও রাখে। অ্যাপল সাইডার ভিনিগার বা শসার রসের বদলে ঠান্ডা বরফজলেও মুখ ধুতে পারেন, কিন্তু তা থেকে বাড়তি উপকার পাবেন না।

ময়শ্চারাইজার মাখুন
ঘরোয়া ফেসিয়ালের শেষ ধাপ এটি। এমনিতে ত্বকের সঙ্গে মানানসই রেডিমেড ময়শ্চারাইজার মাখতেই পারেন। আর ঘরোয়া ময়শ্চারাইজার মাখতে ইচ্ছে করলে স্বাভাবিক ত্বকের মালকিনেরা আধ চাচামচ অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল মেখে নিন। শুষ্ক ত্বক হলে মাখুন নারকেল তেল বা আর্গান অয়েল। আর তেলতেলে ত্বক হলে? সেক্ষেত্রে আপনার দরকার জোজোবা অয়েল বা এক চাচামচ অ্যালো ভেরা জেল!

মনে রাখবেন:
পার্লারে ফেসিয়াল করার পর যা যা নিয়ম মানেন, তার সবক'টি ঘরোয়া ফেসিয়ালের বেলাতেও মেনে চলতে হবে। ফেসিয়ালের পর পরই মেকআপ করবেন না। ফেসিয়াল করতে বসার আগে সব কিছু হাতের কাছে গুছিয়ে রাখুন যাতে বারেবারে উঠতে না হয়। কোনও উপাদান মেখে জ্বালা বা অস্বস্তি শুরু হলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আর সবচেয়ে জরুরি, ফেসিয়াল করার সময় মনটা শান্ত রাখুন। ঠান্ডা, শান্ত পরিবেশে ফেসিয়াল করুন। তাতে সুন্দর ত্বকের পাশাপাশি ভরপুর এনার্জিও পাবেন!

Comments

Popular posts from this blog

ভারতবর্ষ গল্পের নাট্যরূপ

ভাত গল্পের নাট্যরূপ

ঠোঁটের কালচে দাগ দূর করার কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায়