ভাত গল্পের নাট্যরূপ

 


বাংলা প্রকল্প নাট্যরূপ - ভাত ; DRAMATISATION OF '' BHAT / VAT ''

BY Ajahar Hossain- November 25, 2020

নাট্যরূপ - ভাত

Dramatisation of '' Bhat / vat ''



বাংলা প্রকল্প
নাট্যরূপ - ভাত

চরিত্রবর্গ -
বড় বউ - বাঙালি আটপৌরে পোশাক পরিহিতা , স্বল্প মধ্য বয়স্কা একজন মহিলা।
বড় পিসিমা - খান পরিহিতা ষাটোর্ধ্ব মহিলা।
বড়কর্তা - আশি বছর বয়স্ক বৃদ্ধ একজন পুরুষ ( শবদেহের ভূমিকায় )
উৎসব / উচ্ছব - বছর তিরিশের যুবক। পোশাক ও চেহারায় দারিদ্রতার ছাপ।
বাসিনী - বড় বাড়ির কাজের লোক। সাধারণ পোশাক।
তিনটি ছেলে - মন্দিরের চাতালে গল্প করা তিনজন যুবক। সাধারণ পোশাক।
শব বাহক - ৮/১০ জন।
কীর্ত্তন দল - ৩/৪ জন। হাতে খোল করতাল ইত্যাদি।
এছাড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ১ জন হকার , ১ জন চা ওয়ালা ও আরো কয়েকজন ব্যাক্তি। [ বি. দ্র . নাট্যরূপের সুবিধা ও পরিমিত এবং সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপনের জন্য মেজো ও ছোট বউ , নার্স , তান্ত্রিক , বড়কর্তার পুত্রগণ ,ভজন চাকর - এদেরকে অনুপস্থিত চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হলো। ]
প্রথম দৃশ্য
মঞ্চ পরিকল্পনা -
পুরোনো বনেদি বাড়ির অবয়ব। এই অবয়ব আনতে হবে চিত্র বা পোস্টারের মাধ্যমে। অবয়বটি রচনার ক্ষেত্রে বারান্দা বা বাড়ির দালান - এইরূপ প্রেক্ষিত ফুটিয়ে তুলতে পারলে ভালো হয়।
[ উৎসবকে সঙ্গে নিয়ে বাসিনীর প্রবেশ।  উৎসবের হাতে কাঠ কাটার মতো একটি অস্ত্র বা কুঠার ]
বাসিনী - কই গো বড় পিসিমা , কোথায় গেলে ? বড় পিসিমা .... ও বড় পিসিমা , ...... ও বড় বৌদি কোথায় গেলে গো ?
( বড় পিসিমার আবহ কণ্ঠ শুনতে পাওয়া গেল - '' আসছি বাছা , এত হাঁকডাক কিসের '' - এই বলে বড় বৌয়ের সাথে বড় পিসিমার প্রবেশ )
বড় পিসিমা - কে ? ও বাসিনী ; এত হাঁকডাক কিসের ? আর সঙ্গের এই লোকটা কে ?
বাসিনী - পিসিমা এ উচ্ছব ; আমার গাঁ সম্পর্কে দাদা হয় গো ; যজ্ঞের কাঠ কাটার জন্য একে  এনেছি।
বড় পিসিমা - ( উৎসবের উদ্যেশ্যে ) তা পারবে বাছা সব কাঠ ঠিকমতো কাটতে ! আমার দাদা ; এই বড় বৌমার শ্বশুর মশাই মরতে বসেছে। তাকে বাঁচানোর জন্য যজ্ঞ হবে। ......... ছোট বৌয়ের বাবা এক তান্ত্রিক এনেছেন। বেল , ক্যাওড়া ,  অশ্বথ্থ , বট ,তেঁতুল গাছের কাঠ এসেছে অধমন করে। প্রতিটিকে সমান মাপে কাটতে হবে , পারবে তো ?
উৎসব - ( হাত জোড় করে ) হ্যাঁ মা  পারবো।
বড় পিসিমা - তাহলে আর দেরি কেন , কাজে লেগে পড়। যাও।
বাসিনী - এস উচ্ছব দাদা , এই ...... এই দিকে।
[উৎসব ও বাসিনীর প্রস্থান ]
বড় বউ - বা-বা ....... এই লোকটাকে আবার কোথা থেকে আনলো !
বড় পিসিমা - কোথা থেকে আনলে মানে ? ঝড় জলে দেশ ভেসে গেছে।  আমাদের বাসিনীর কে হয়। সেই ডেকে আনলে।
বড় বউ - লোকটাকে কেমন যেন দেখতে !
বড় পিসিমা - ( বিরক্ত হয়ে ) কাঠ কাটতে ময়ূর ছাড়া কার্ত্তিক আসবে না'কি ? তোমরা তো দশটা পয়সা দিতে পারবে না প্রাণে ধরে। এই চোদ্দ দফায় কাজ করবে , পেটে দুটো খাবে বই তো নয়। কেনা চাল নয় , বাদা থেকে চাল আসছে। তা দিতেও আঙুল বেঁকে যাচ্ছে ! যত্তসব !
( তারপর মঞ্চের অন্য দিকে তাকিয়ে )
মেজো বউমা তোমার রান্না কতদূর ? আর কত সময় লাগবে বাছা !
( এই বলে পিসিমার প্রস্থান।  ২/৩ সেকেন্ড পর ধীর পায়ে বড় বউ মঞ্চের সামনের দিকে এগিয়ে আসে। কিন্তু দৃষ্টি ভাসা -ভাসা এবং তা দর্শকদের প্রতি নয়। স্বগতোক্তির মতো সে বলে .......)
বড় বউ - সত্যিই। ......আমার শ্বশুর মশাই মরতে বসেছেন। বিরাশি বছরটা অনেক বয়স। কিন্তু তিঁনি বেশ টনকো ছিলেন। তবে ক্যান্সার বলে কথা। ক্যানসার যে লিভারে হয় - তাইই আমি জানতাম না। .......
( কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে তারপর আরো মঞ্চের সামনের দিকে এগিয়ে )
মাঝে - মাঝে আমি ভাবতে চেষ্টা করি শ্বশুর মশাই যখন থাকবেন না তখন অবস্থাটা কেমন হবে ! তখনও কি চাঁদ - সূর্য উঠবে !
( ২/৩ সেকেন্ড পর অবস্থান সামান্য বদলে )
শ্বশুর মশাই আমার কাছে ঠাকুর দেবতার সমান। তাঁর জন্য দই পেতে ইসবগুল দিয়ে শরবত করে দিতে হয় ; রুটি ,লুচি তৈরী ; বিছানা তৈরী ; পা টিপে দেওয়া - সে সব কি আর করতে হবে না ! কে জানে !
( একবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে )
যাই দেখি , ওদিকে যাই।
( বড় বউয়ের প্রস্থানের সাথে সাথে মঞ্চ অন্ধকার করতে হবে এবং কিছু কাঠ মঞ্চের একপ্রান্তে রেখে দিতে হবে অন্ধকারের সুযোগে।  এরপর বাসিনী ও উৎসবের প্রবেশ। মঞ্চের একপাশে থাকা কাঠগুলি দেখিয়ে )
বাসিনী - এই দেখো উচ্ছব দাদা , এই কাঠগুলো তোমাকে কাটতে হবে।সব সমান মাপের।
উৎসব - আচ্ছা বাসিনী ....... এদের এত বড় বাড়ি , কত জমি , কত চাল ....... তাই না !
কত রকম চাল থরে থরে সাজানো আছে। ঝিঙেসাল চালের ভাত নিরামিষ ডাল তরকারির সঙ্গে। রামসাল চালের ভাত মাছের সঙ্গে। বড়োবাবু কনকপানি চাল ছাড়া খান না। মেজো আর ছোটোর জন্য বারোমাস পদ্মজালি চাল রান্না হয়। বামুন চাকর , ঝি দের জন্য মোটা সাপটা চাল।
উৎসব - হ্যাঁ বাসিনী , এত নানাবিধ চাল ? ওই পাঁচভাগে ভাত হয় ?
বাসিনী - হবে নে ? বাদায় এদের এত জমি। চাল এনে এনে পাহাড় করেছে। বড় পিসিমা বেচেও দিচ্ছে নুক্কে নুক্কে। আমিই বেচতেছি সে চাল।
উৎসব - বাদায় এদের এত চাল হয় ! ( তারপর অনুরোধের সুরে ) তা দে দেকি বাসিনী এক মুষ্ঠি চাইল দে। গালে দে জল খাই। বড্ড ঝ্যামোন আঁচড় কাটতিছে পেটের মধ্যিখানে। সেই ক'দিন হলো ভাত খাই না। দে বাসিনী বাগ্যতা করি তোর।
বাসিনী - আরে , আরে !  কর কি উচ্ছব দাদা ! গাঁ সম্পর্কে দাদা তো হও ! কেন বা এমন করতেছ। পিসিমা দেখতে পেলে আর রক্ষে থাকবে না। আমি ঠিক তাগেবাগে দে যাবো। তুমি হাত চালিয়ে নাও দেখি বাবা। এদেরকে বলিহারি ঝাই। এট্টা লোক ক'দিন খাইনি শুনছো। আগে চাট্টি খেতে দে ....... উচ্ছব দাদা তুমি চিন্তা করো না ; তুমি কাজ শুরু করো ; আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করতেছি।
( বাসিনীর প্রস্থান। বাসিনীর প্রস্থানের পর উৎসব একবার কাঠগুলিকে দেখে , একবার নিজের ধারালো কাটারিটি দেখে ; তারপর উদাসভাবে উদ্দেশ্যহীন হয়ে এদিক ওদিক তাকায়। এইসময় বড়পিসিমার প্রবেশ। উৎসব এখনো কাঠ কাটতে শুরু করে নি দেখে বড় পিসিমা খুব চঞ্চল হয়ে পড়েন। )
বড় পিসিমা - এ কি বাছা ! এখনও শুরু করো নি ! হাত চালাও বাছা। ওদিকে শুষছে কত্তা , তা কাঠগুনো দাঁড়িয়ে দেখছো ?
উৎসব - বড্ড খিদে নেগেচে মা'গো !
বড় পিসিমা - এই শোনো কতা ! ভাত নামলেও খাওয়া নেই একন। তান্ত্রিকের নতুন বিধেন হলো সর্বস্ব রেঁধে রাখো , হোম হলে খেও।  তুমি হাত চালাও বাছা।
( উৎসব উঠে পড়লো এবং কাঠের স্তুপের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাঠ কাটতে শুরু করলো। উৎসবকে কাঠ কাটতে দেখে পিসিমার প্রস্থান। উৎসব কাঠ কাটা চালিয়ে যেতে লাগলো। একটু পরেই বাসিনীর প্রবেশ। চঞ্চল ও সতর্ক দৃষ্টি চারদিকে। হাতে একটা ছোট পুটুলি। )
বাসিনী - এই নাও উচ্ছব দাদা , চটপট খেয়ে নাও। কেউ না দেখতে পায়। দেরি কোরো না মোটে। গরিবের গতর এরা সস্তা দেকে।
উৎসব - ( পুটুলিটা নিলো এবং তা খুলে খেতে খেতে ) হ্যাঁ , তা বাসিনী ,তোর বাড়ির খবর কি ?
বাসিনী - আমি যেতে পারিনি। আর তোমার বাড়িতে সব ঠিকঠাক আছে তো ?
উৎসব - বাড়িটাই তো নেই রে , তার আবার সব ঠিক !
বাসিনী - কি বলছো ?
উৎসব - সেদিন দিনের গতিক ভালো ছিলো না মোটে। হিঞ্চে সেদ্ধ ,গুগলি সেদ্ধ ,নুন আর লঙ্কা পোড়া দিয়ে পেট পুরে খেয়েছিলাম। তারপর সব বদলে যেতেন শুরু করলো। বিদ্যুতের চমকে ক্ষনিকের আলোয় দেখলাম মাতলার জল সমুদ্র রাক্ষসের মতো ছুটে আসলো। সব কিছু গ্রাস করে ফেললো। চুন্নুনি , চুন্নুনির মা , ছোট খোকা , আমার টিনের কৌটা সব ভেসে গেল। কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। আমিও ভেসে যাচ্ছিলাম। কোথায় যেন আটকা পড়ে গেলাম। দু -তিন দিন তো সেই দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। ভাবলাম ওরা বুঝি সাড়া দেবে। আমি হয়তো ওদের শোকে প্রেত হয়ে  গিয়েছিলাম।
বাসিনী - তারপর ?
উৎসব - লঙ্গরখানাতে ক'দিন খিচুড়ি খাওয়াতেছিলো। কিন্তু আমার হুঁশ ফেরার আগে খিচুড়ি শেষ। তারপর থেকেই আধপেটা , না খেয়ে থাকার শুরু। মহানাম শতপথীও এলে না আমি গায়েঁ থাকতে থাকতে। ভাবতেছি কালিঘাটে ওদের ছেরাদ্দ সেরে ফেলবো।
বাসিনী - আমি এখন উঠি গো উচ্ছব দাদা ; তুমি কাঠ গুলো কেটে নাও। যজ্ঞ শেষ হলে পর খেও।
[ বাসিনীর প্রস্থান। উৎসব আবার কাঠ কাটতে শুরু করলো। কিছুক্ষন কাঠ কাটার পর তার কাজ শেষ হলো। সে কাঠ গুলোকে বারে বারে নিয়ে গিয়ে মঞ্চের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রাখলো। ]
উৎসব -( স্বগতোক্তি ) যাক বাবা , কাজ তো শেষ হলো। তবে যজ্ঞ তো হয়নি বলে মনে হতেছে। যাক , আমি বাইরে যে বসি।
[ উৎসবের প্রস্থানের সাথে সাথে মঞ্চ অন্ধকার। ]
দ্বিতীয় দৃশ্য
মঞ্চ পরিকল্পনা - একটি শিবমন্দিরের চাতাল।  তিনটে ছেলে বসে বসে তাস পিটোচ্ছে। উৎসব চাতালের একপ্রান্তে শুয়ে আছে। এই শিবমন্দিরের চাতালের প্রেক্ষাপটটিকেও ক্যানভাস , পোস্টার , ছবি ,অঙ্কন ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করতে হবে।
১ ম জন - যত সব ফালতু ব্যাপার স্যাপার চলছে বড় বাড়িতে।
২ য় জন - কি ফালতু ?
১ ম জন - ৮২ বছরের বুড়োকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য তন্ত্র -মন্ত্র -যাগ -যজ্ঞ আরো কত কি শুরু হয়েছে কে জানে !
৩ য় জন - সত্যি পয়সা থাকলে কি না হয় ! বেঁচে থাকলে ও আর কতদিন জীবন পাবে একশো বছর ! যত্ত সব !
[ এই তিনজনের কথা চলতে  চলতেই উৎসব ডুকরে কেঁদে উঠলো ]
১ ম জন - কি হে কানছো কেন ?
উৎসব -( ১ ম জনের দিকে তাকিয়ে ) আমারে সুদচ্ছেন বাবু ?
১ ম জন - হ্যাঁ হে !
উৎসব - আবাদ থেকে আসতেছি বাবু গো ! ঝড়ে জলে সব শেষ হয়ে গেল। চুন্নুনি , চুন্নুনির মা , ছোট খোকা - সবাই হারিয়ে গেল , মরে গেল গো মরে গেল ....... ( কান্না )
১ ম জন - আচ্ছা , আচ্ছা ঠিক আছে ; কেঁদো না। এখন ঘুম এসো।
[ উৎসব ঘুমিয়ে পড়লো। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে গেল। কিছুক্ষন পর আলো জ্বললো। উৎসব এখনো ঘুমিয়ে আছে ;তবে সেই তিনজন তাস পিটোনো ছেলে এখন আর মঞ্চে নেই মঞ্চের ডানদিক ও বাঁ দিকের দরজা দিয়ে ৭/৮ জন চঞ্চল ও ব্যাস্ত পায়ে চলাফেরা করছে। তারা সকলেই খুব উদ্বিগ্ন ও চিন্তান্বিত। তাদেরই মধ্যে একজন ঘুমন্ত উৎসবের পা ধরে ঠেলা মারতে লাগলো। ]
জনৈক ব্যাক্তি - এই , এই , ওঠো ,ওঠো...... কে তুমি ?
উৎসব - ( ধড়ফড় করে উঠে পড়ে ) - বাবু ........ আমি ..........
জনৈক ব্যাক্তি - চুরির মতলবে পড়ে আছো ?
উৎসব - না বাবু , এই বাড়িতে কাজ করতেছিলাম।
জনৈক ব্যাক্তি - ওঠো , ওঠো।
[ উৎসব উঠে পড়ে , কিন্তু চারপাশে ব্যাস্ত লোকজন দেখে সে প্রচন্ড ঘাবড়ে যায়। তারপর ভিড়ের সাথে মিশে গিয়ে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করে। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে আসে। ]  
তৃতীয় দৃশ্য :-
মঞ্চ পরিকল্পনা -
প্রথম দৃশ্যের অনুকরণে। তবে এবার একজন বৃদ্ধ মৃতরূপে বিছানায় শুয়ে আছেন। তাকে ঘিরে আছে বড় পিসিমা , বড় বউ সহ অন্যান্য আত্মীয়বর্গ। তবে দর্শকদের দিকটা ফাঁকা রাখতে হবে।
বড় পিসিমা - ( বিলাপ ) ও দাদা , তোমার ছোট বেয়াই কি ডাকাতে সন্নেসী আনলে গো দাদা। যজ্ঞী হলো আর তুমিও মল্লে। ও দাদা ! তুমি যে বিরাশিতে যাবে তা কে জানতো বলো গো !  তোমার যে আটানব্বই বছর বেঁচে থাকার কথা গো দাদা !
[ বড় পিসিমার বিলাপ চলতে চলতেই উৎসব মঞ্চে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে। সে চুপচাপ সবকিছু দেখতে থাকে। একজন বছর পঁয়ত্রিশের যুবকের দিকে তাকিয়ে পিসিমা বলে উঠলো -]
ও বড় খোকা কেত্তনের দল এল ? বোনরা , দিদিরা এল কি ? চন্নন বাটছো কেউ ! খাট , ফুল , শব বস্তুর সব তৈরী তো !
[ তারপর আবার শবদেহের দিকে তাকিয়ে ]
ও দাদা গো ; এত অকালে তুমি চলে গেলে গো ! তিন ছেলে হোম ছেড়ে উঠে গেল যে , এসব কাজে বিঘ্নি পড়লে আর রক্ষে আছে ? ও দাদা গো !.......
[ এইসব কথা বলতে বলতেই মঞ্চে চলে এসেছে কীর্তনের দল এবং শব বাহকের দল। বড় পিসিমার বিলাপ চলতে চলতেই তারা শবদেহ নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করে এবং বড় পিসিমার পিসিমার সংলাপ শেষ হলেই কীর্তন শুরু হয় এবং শব বাহকদের দল শব নিয়ে মঞ্চের একপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তারপর উৎসব বাদে সকলেই একে একে প্রস্থান করে। উৎসব বোকার মত মঞ্চের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ বাসিনীর প্রবেশ। তার হাতে বড় একটা হাঁড়ি। খাবারের ভারে সে হাঁড়িটি তুলতে পারছে না। ]
বাসিনী - এই যে উচ্ছব দাদা , এট্টু ধরো দেকিনি ! বাড়ির মানুষ মারা গেছে , সব খাবার ফেলে দে আসতে হবে।
উৎসব - ( ক্ষুধাতুর দৃষ্টিতে হাঁড়িটির দিকে তাকিয়ে ) আমাকে দে হাঁড়িটা। দূরে ফেলে দে আসি , লয়তো কুকুরে ছেটাবে।
[ হাঁড়িটি নিয়ে উৎসব দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যেতে উদ্যোগ নেয় ]
বাসিনী - দাদাগো তুমি কেন অমন করছো দাদা , অশুচি বাড়ির ভাত খেতে নি গো দাদা ! তুমি ফেলে দাও।
[ উৎসব তার কথায় কান না দিয়ে দ্রুত পায়ে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করে। ]    
অন্তিম দৃশ্য :-
মঞ্চ পরিকল্পনা -
একটি রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম। প্রয়োজনীয় চিত্র ও আবহ শব্দ দ্বারা পরিবেশটিকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। ১ জন হকার , ১ জন চা ওয়ালা , ২/৩ জন যাত্রী বেঞ্চে প্রতীক্ষায়।  তারপর উৎসব এদিক ওদিক দেখতে দেখতে সেই হাঁড়িটি নিয়ে মঞ্চের ঠিক মাঝখানে দর্শকদের দিকে মুখ করে বসে পড়ে। হাঁড়িটিকে সামনে রাখে।
উৎসব - ( স্বগতোক্তি , বাসিনীকে ব্যাঙ্গ করে ) অশুচি বাড়ির ভাত খেতে নি গো দাদা ..............   কত দিন খেতে পাই না। আজ খাবো ভাত।
[ তারপর উৎসব ভাতের ভিতর হাত ঢুকিয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে থাকে। ]
চুন্নুনীরে নে তুইও খা , চুন্নুনির মা খাও , ছোট খোকা খা , আমার মধ্যে বসে তোরাও খা।  বাবা গরম গরম ভাত ............ এই ভাত ফেলে দেওয়া যায় ! এবার জল খাই !
[ একজন হকারের কাছ থেকে চেয়ে জল খেলো তারপর হাঁড়ির পাশে শুয়ে পড়লো। আলো নিভে গেল , আবার কয়েক সেকেন্ড পর জ্বলে উঠলো। এবার ৪/৫ জন লোক উৎসবের হাঁড়িটার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলাবলি করছে। ]
জনৈক ব্যাক্তি - এই কে রে তুই ? ওঠ ওঠ বলছি।
[ উৎসব ঘুম চোখে ধড়ফড় করে উঠে পড়লো ]
জনৈক ব্যাক্তি ২ - এই কে তুই ? এই হাঁড়ি কোথায় পেলি তুই ? বল এই হাঁড়ি কোথায় পেলি ?  
 উৎসব -( ঢোক গিলে) আজ্ঞে এ হাঁড়ি ....... এ হাঁড়ি আমার।
[ উৎসবের উত্তর শুনে দ্বিতীয় জনৈক ব্যাক্তি উৎসবের গালে এক থাপ্পড় মারলো ]
জনৈক ব্যাক্তি ২ - ব্যাটা চোর ; পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি , আর এত দামি পেতলের হাঁড়িটা তোর ! এই ধরুন তো ( অন্যান্য ব্যাক্তিদের উদ্দেশ্যে ) , ধরুন তো সকলে মিলে , এই চোরটাকে পুলিশে দিয়ে আসি।
[ তারপর তারা উৎসবকে মারতে মারতে মঞ্চের বাইরে নিয়ে গেল ; মঞ্চের সব আলো নিভে গেল ; শুধু একটি ফোকাস হাঁড়িটার ওপর স্থির হয়ে রইলো। শুধু আবহ থেকে উৎসবের একটি সংলাপ শোনা গেল -  ]
উৎসব - ( আবহ ) না বাবুরা আমি পেতলের হাঁড়ি চুরি করিনি ; আমি তো শুধু ভাত খাচ্ছিলাম।
[ ধীরে ধীরে পর্দা নেমে এলো ; হাঁড়িতে আলোর ফোকাস শেষ পর্যন্ত রইলো। ]
সমাপ্ত।    

Comments

  1. অপরের কনটেন্ট চুরি না করে নিজের কিছু লেখার চেষ্টা করুন। অবিলম্বে এসব বন্ধ না করলে google partner program কে জানাতে বাধ্য হব।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

ভারতবর্ষ গল্পের নাট্যরূপ

ঠোঁটের কালচে দাগ দূর করার কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায়